এয়ারকন্ডিশনিং কি ও এর ইতিহাস এবং এর মূলনীতি।
মানুষ পৃথিবীতে স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে আরামদায়ক স্থান খুঁজে ছিল। এক সময় বরফের সন্ধান পেয়ে প্রচন্ড গরমের তুলনায় আরামদায়ক অবস্থা বা নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডলের সন্ধান পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বেফ্রিজারেশনের আদি ইতিহাস এই সময় হতে শুরু হয়।
প্রাকৃতিক বরফের অভাব ছিল না কিন্তু কতকগুলাে অসুবিধার কারণে প্রাকৃতিক বরফ দ্বারা রেফ্রিজারেশনের ব্যবহার ছিল সীমিত। প্রাকৃতিক বরফের উপর নির্ভরতা কমাতে কৃত্রিমভাবে বরফ তৈরির কৌশল নিয়ে ভাবতে থাকেন। অন্তত একজন গবেষক উদ্ভাবন করেন নিম্ন তাপমাত্রায় বরফের সংস্পর্শে পানিও বরফ হয়। অর্থাৎ পানির সংস্পর্শে এমন একটি উদ্বায়ী পদার্থ রাখতে হবে যার উদ্বায়ী তাপমাত্রা বরফের তাপমাত্রার নিচে।উনবিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ আবিষ্কৃত হবার এক পর্যায়ে বর্তমানে রেফ্রিজারেন্ট বা হিমায়ক আবিষ্কার হয়, যা রেফ্রিজারেশন পদ্ধতির আবিষ্কারের পথ খুলে যায়।১৯১০ সালের প্রথম দিকে মেকানিক্যাল বা ভেপার রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি দেখা যায়। উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্পীভূত রেফ্রিজারেন্টকে তরল করে আবদ্ধ চক্রে পুনঃপুন ব্যবহার করা হয়।
১৯১৩ সালে জে, এম, লার্সেন (J. M.Larsen) একটি হস্তচালিত কম্প্রেসরযুক্ত রেফ্রিজারেশন যন্ত্র তৈরি করেন যা বাস গৃহে ব্যবহার করা হত। হস্তচালিত পদ্ধতির কারণে এটি উন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তা দেখা যায়।
১৯১৮ সালে বৈদ্যুতিক মােটরচালিত ওপেন কম্প্রেসরযুক্ত রেফ্রিজারেশন আমেরিকার বাজারে "কেলভিনেটর" কোম্পানি নামে বের হয়।
১৯২৮ সালে "সীন্ড বা হার্মেটিক" অটোমেটিক রেফ্রিজারেটর ইউনিট "জেনারেল ইলেকট্রিক" চালানাের জন্য প্রয়ােজনীয় বিদ্যুৎ শক্তির উপর নির্ভরতা কীভাবে কমানাে যায় তা নিয়ে গবেষণা চলতে থাকে, এবং মেকানিক্যাল বা অ্যাবজপশন (Absorption) রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। যার অন্য নাম " মনিটর টপ"।
১৯২৭ সালে ইলেকট্রোলাক্স কোম্পানি অটোমেটিক ডােমেস্টিক অ্যাবর্জপশন" ইউনিট উপহার দিয়ে ছিলেন যা অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী। তা চালানাের জন্য প্রয়ােজনীয় তাপ শক্তি যে কোন তাপের উৎস হতে গ্রহণ করা হত। যেমন- বিদ্যুৎ, জ্বালানি।
১৯২০ সালের শেষ দিকে মেকানিক্যাল রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিকে হীটিং পদ্ধতির সঙ্গে সংযােগ করে গ্রীষ্মকালীন কুলার তৈরি করা হয়।
১৯২৯ সাল পর্যন্ত রেফ্রিজারেশন পদ্ধতির ব্যবহার ছিল মূলত বরফ তৈরি, পানীয় ঠাগডাকরণ এবং খাদন্রব্য সংরক্ষণের উপর সীমাবন্ধ। কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহৃত হত।
১৯৩০ সালের শেষের দিকে অটোমােবাইল এয়ারকন্ডিশনিং গাড়ীর মধ্যে অল্প প্রসার লাভ করে।
১৯৪০ সালে বাস গৃহে ব্যবহৃত ইউনিটগুলাে হার্মেটিক টাইপে রূপান্তরিত করা হয় এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও সন্তোষজনক। বড় বড় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণে এবং বড় বড় কমফোর্ট কুলিং প্ল্যান্টে ব্যবহার করা হয়।
এয়ার কন্ডিশনিং এর মূলনীতি:
বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য সাধারণত বৈদ্যুতিক হিটার, হীট পাম্প প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এয়ারকন্ডিশনিং স্থান বা রুমের তাপমাত্রা সাধারণত 22°C হতে 26°C বা 54°F হতে 5৪°F থাকে। এয়ারকন্ডিশনিং পদ্ধতি সাধারণত দুই ঋতুর উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যেমন- গ্রীষ্ম ও শীতকাল। গ্রীষ্মকালে বাতাসের তাপমাত্রা বেশি থাকায় তাপমাত্রা কমানাে প্রয়ােজন এবং শীতকালে বাতাসের তাপমাত্রা কম থাকায় তাপমাত্রা বাড়ানাে প্রয়ােজন।
এয়ারকন্ডিশনার নির্লিখিত কাজগুলাে সম্পাদন করে:
(ক) বাতাসের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
(খ) বাতাস পরিষ্কার
(গ) কক্ষে বাতাস সঞ্চালন
(ঘ) বাতাসের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ
(ঙ) বাতাস রােগমুক্ত
(চ) কর্মজীবন আরামদায়ক
(ছ) সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment.